স্পেনশর জনসনের হু মুভড মাই চিজ?

আমরা অনেক বার শুনেছি ” Change is only constant” তারপরেও আমরা পরিবর্তনে ভয় পাই। পরিবর্তন দেখলে ভয় পাই। নিজে পরিবর্তন হতে ভয় পাই। অনেক দিন পরে পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হলে যখন বলে তুই তো সেই আগের মতোই আছিস তখন মনে মনে আনন্দিত হই। আপনি ও কি তাই? তাহলে আপনার পড়া দরকার স্পেনশর জনসনের লেখা হু মুভড মাই চিজ বইটা। যা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবি।

হু মুভড মাই চিজ? প্রথম পাতা।

হু মুভড মাই চিজ? সারাংশ

একটি গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে চারজন থাকত। স্নিফ ও স্কারি নামক দুটি ইঁদুর এবং হেম ও হাও নামক ইদুরের আকারের দুজন ছোটো মানুষ। চার জনের কাজ দেখলে অনেকটাই একি মনে হবে।চার জন প্রত্যেক দিন তাঁদের খাবারের খোঁজে বেরোতো। তাঁরা প্রত্যেক দিন গোলোক ধাঁধাঁর নতুন নতুন রাস্তায় খাবার খোঁজার চেষ্টা করত। স্নিফ তাঁর শুঁড় গুলো ব্যাবহার করে খাবারের গন্ধ শুঁকে বলত এবং স্কারি খুব দ্রুত সেই রাস্তায় ছুটে যেত এবং পরে ফিরে আসত।

হু মুভড মাই চিজ গল্পে স্নিফ এবং স্কারির জন্য চিজ শুধুই একটি খাদ্য বস্তু কিন্তু হেম ও হাও এর জন্য চিজ শুধু চিজ নয়। তাঁদের জন্য চিজ তাঁদের খাবার, সম্পত্তি, স্বপ্ন অর্থাৎ একজন মানুষের যা কিছু তা সব।

কিন্তু হেম ও হাও যেহেতু মানুষ ছিল তাই তাঁদের খাবার খোঁজার পদ্ধতি ছিল একটু জটিল তাঁরা তাঁদের আবেগ এবং জটিল বুদ্ধি কাজে লাগাত খাবার খোঁজার জন্য। কিন্তু চার জনেই খুব সকালে উঠে ছোটার জুতো পরে খাবার খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়ত। এইরকম ভাবে তাঁরা একদিন একটা চিজ স্টেশান C নামক জায়গায় তাঁদের প্রিয় চিজ পেয়ে যায়। এবং এরপর তাঁরা প্রত্যেক দিন সকালে উঠে একি রাস্তায় যেত চিজ পাওয়ার জন্য।

প্রথম প্রথম স্নিফ ও স্কারি এবং হেম ও হাও সকাল সকাল গেলেও যত দিন যেতে থাকল হেম এবং হাও একটু একটু করে দেরি করতে থাকল। এবং কিছুদিন পরে হেম ও হাও তাঁদের ঘরটাও চিজ স্টেশানের কাছাকাছি জায়গায় সরিয়ে আনল।তারা তাঁদের ছোটার জুতো সরিয়ে রাখল। মাঝে মাঝে তাঁরা তাঁদের বন্ধুদের ও ডেকে নিয়ে আসত।

স্নিফ ও স্কারি কিন্তু তাঁদের প্রত্যেক দিনের নিয়ম পরিবর্তন করেনি তাঁরা প্রত্যেক দিন সকালে উঠে নিজেদের ছোটার জুতো পরে নির্দিষ্ট চিজ স্টেশানে যেত এবং চিজ উপভোগ করত। প্রত্যেকদিন চিজ স্টেশান এবং চারপাশ ঘুরে দেখতো কোথাও কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। তাঁরা এখনো তাঁদের ছোটার জুতোটা নিজেদের গলায় ঝুলিয়ে ঘুমাতো যাতে সকালে উঠে ছোটার জুতো খুঁজতে না হয় এবং দেরি না হয়।এবং তাঁরা এটাও ভাবতো আবার কোন দিন হয়তো খাবারের খোঁজে তাঁদের বেরিয়ে পড়তে হবে। কারন তাঁরা লক্ষ করছিল চিজের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমছে।

একদিন সকালে স্নিফ এবং স্কারি চিজ স্টেশানে এসে দেখলো সেখানে চিজ নেই। যেহেতু তাঁরা আগে থেকে অনুভব করেছিল যে এটা ঘটতে পারে তাই তাঁরা বিশেষ চিন্তিত না হয়ে তাঁরা তাঁদের ছোটার জুতো পরে নতুন চিজ স্টেশানের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।

হেম ও হাও যেমন দেরি করে চিজ স্টেশানে পৌঁছাত তেমনি চিজ স্টেশানে পৌঁছে দেখল স্টেশানে একটুও চিজ নেই। এটা দেখার পর প্রথমে তাঁরা বিশ্বয়ে হতবাগ হয়ে গেল। তাঁরা কোন ভাবে বিশ্বাস করতে চাইছিলনা যে চিজ নেই। তাই তাঁরা বারে বারে ভালো করে চিজ স্টেশান C -এর কোনে কোনে খুঁজে দেখল তারপর হাত পা ছুড়লো চিৎকার করল। এবং নিজেদের ঘরে ফিরে গেলো।

পরের দিন আবার তাঁরা চিজ স্টেশান C তে এলো, চিজ খুজলো কিন্তু তাঁরা আবার হতাশ হলো চিৎকার করলো একে অন্যকে দোষারোপ করলো এবং ঘরে ফিরে গেল।যেহেতু তাঁরা খাবার পাচ্ছিলো না তাই আস্তে আস্তে শারীরিক ভাবে দুর্বল ও হয়ে পড়ছিলো। হাও-র মনে হলও স্নিফ ও স্কারি তো আসছে না? কথা টা বলতেই হেম খুব তাচ্ছিল্যের সাথে বলল স্নিফ এবং স্কারি শুধুমাত্র ইঁদুর তাঁদের এত বুদ্ধিই নেই যে তাঁরা এমন কিছু বুঝে ফেলবে যেটা ওরা বুঝবে না।

হু মুভড মাই চিজ বইতে হেম এবং হাও চরিত্র দুটিকে একদম সাধারন ভাবে দেখানো হয়েছে, যারা ভাবেন তাঁদের নিজেদের যায়গায় নিজেদের জীবনে কোন রকম পরিবর্তন হতে পারে না। যাই হোক তাঁরা এবার একটা মেশিন আনে এবং চিজ স্টেশান C তে একটি গর্ত করে দেখতে থাকে সেখানে কোন রকম চিজ আছে কি ন? যথারিতী সেখানে কোন চিজ পাওয়া যায় না। কিন্তু হাও এখন কার্যকলাপ এবং উৎপাদনশীলতার মধ্যে তফাত বুঝতে পারে।

হাও বোঝে যে স্নিফ এবং স্কারি এমন কিছু বুঝতে পেরেছে যেটা তাঁরা বোঝেনি। কিন্তু হেম কোন ভাবে এটা বুঝতে রাজি নয়। হাও সিদ্ধান্ত নেয়। তাঁদের চিজ স্টেশান C তে অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়া উচিৎ কিন্তু হেম তাঁর সাথে একমত নয়। হেম চিজ স্টেশান C থেকে চিজ চলে যাওয়ার কারন শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেতে চায়। অগত্যা হাও তাঁর ছোটার জুতো খুঁজে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।হাও নতুন রাস্তায় বেরুনোর আগে গোলোক ধাঁধাঁর দেওয়ালে একটা একটা চিজের ছবি আঁকে এবং সেখানে লেখে যদি তুমি পরিবর্তন না কর তাহলে তুমি শেষ হয়ে যাবে।

এই বেরনো তাঁর কাছে সহজ ছিল না।তার নিজের ও এই চেনা পরিচিত যায়গা ছেড়ে নতুন রাস্তায় বেরোতে যথেষ্ট ভয় করছিল। কিন্তু তাঁর এই ভয় আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে যখন সে রাস্তা অতিক্রম করতে থাকে। এবং যখন সে ভাবতে থাকে হয়তো তাঁর জন্য আরও অনেক ভালো স্বাদের চিজ অপেক্ষা করছে। কিন্তু তাঁর কাছে এটা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু এটা তাঁর চোখ খুলে দিচ্ছিল হাও বুঝতে পারছিল যে চিজ স্টেশান C-র চিজ একদিনে চলে যায়নি। এবার থেকে সে আরো বেশি সচেতন থাকবে।

যেহেতু হাও -এর অনেক দিন কিছু খাওয়া হয়নি তাই সে দুর্বল হয়ে পড়ছিল কিন্তু তাঁর সুস্বাদুকর চিজ পাবার আকাঙ্ক্ষা তাঁকে চলার জন্য উৎসাহিত করছিল। এবং সে এটা ও বুঝতে পারছিল এতদিনের তাঁর যে ভাবনা ছিল পরিবর্তন খারাপ সেটা নয় পরিবর্তন ভালো ও হতে পারে।

এরপর চলতে চলতে গোলক ধাঁধার এক এক যায়গায় গিয়ে সে একটি চিজ স্টেশান দেখতে পেলো এবং সেখানে খুব অল্প পরিমাণ চিজ পেয়ে ও গেল। সেখানকার চিজ গুলো খুবি সুস্বাদুকর ছিল যেটা সে এর আগে কোণ দিন খায়নি তাই সে কিছু টা খেলো এবং কিছুটা নিল তাঁর বন্ধু হেম কে দেওয়ার জন্য। এবং এটাও সে বুঝে গেল, যদি সে আগে আসতো তাহলে সে এই সুস্বাদু কর চিজ পুরোটাই উপভোগ করতে পারত।

হাও নতুন চিজ নিয়ে হেম – এর কাছে পৌঁছে নতুন ধরনের চিজ দিল এবং বোঝালো তাঁর সাথে চিজের খোঁজ করতে যাওয়ার জন্য, কিন্তু হেম কোনভাবে রাজি হলোনা এবং বলল তাঁর সেই পুরানো চিজ -ই চাই। হাও আবার বেরিয়ে পড়ল নতুন চিজ-এর খোঁজে। এবার সে খুজতে খুঁজতে একটি নতুন চিজ স্টেশান পেলো যেখানে যার নামে স্টেশান N এবং এখানে আরো অনেক বেশি চিজ এবং আরো অনেক সুস্বাদুকরও বটে যেমনটি সে রাস্তায় আস্তে আস্তে ভেবেছিল। এর কিছুক্ষন পরে সে দেখতে পেলো স্নিফ এবং স্কারি আগে থেকে সেখানে পৌঁছে গেছে। স্নিফ এবং স্কারি তাঁকে স্বাগত জানালো এবং হাও তাঁদের দেখাদেখি নিজের ছোটার জুতোটা গলায় বেধে নিলো। যাতে পরবর্তী সময়ে বেরিয়ে পড়তে দেরি না হয়।

হু মুভড মাই চিজ -এর প্রধান বিষয়।

লেখক স্পেনশর জনসন তাঁর হু মুভড মাই চিজ বই এ স্নিফ, স্কারি এবং হেম ও হাও – এর গল্প টা রুপক হিসাবে ব্যাবহার করলে ও এখান থেকে ৭টা প্রধান বিষয় উঠে আসে যা আমরা আমদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি।

  • পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী
  • পরিবর্তন কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেনে নিন।
  • পরিবর্তন কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বুঝতে চেষ্টা করুন।
  • পরিবর্তনের জন্য তৈরী থাকুন।
  • প্রবর্তনকে উপভোগ করুন।

হু মুভড মাই চিজ কেন পড়বেন, কারা পড়বেন?

গল্প টি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। হয় আমরা সেগুলোকে দেখতে চাই না বা দেখতে পাইনা বা দেখতে শিখিনা। কখন কখনো পরিবর্তন কে দেখেও মেনে নিতে চাই না। এই বই আপনাকে পরিবর্তনকে সহজ করে বুঝতে সাহায্য করবে।

এই বই সকলের জন্য সমান ভাবে গ্রহণ যগ্য যারা জীবনে সাফল্য পেতে চান। কারন আমদের ব্যাক্তিগত জীবনে, জীবিকা সমস্ত জায়গায় অনবরত পরিবর্তন হচ্ছে তো তা বুঝতে গেলে এই বই আপনাকে সাহায্য করবে।

আমরা শুধুমাত্র এই বইয়ের মুল গল্পকে সংক্ষেপে আমাদের মতো করে আপনার কাছে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু বই এর মধ্যে এমন অনেক উদাহরণ আছে। এমন অনেক উক্তি আছে যা খুবি কাজের এবং মজাদার।

ধন্যবাদ।

আমদের অন্যান্য বই এর সারাংশ সংক্ষেপ

রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড

Leave a Comment