Holiday at Santiniketan. শান্তিনিকেতনে ছুটির দিন।

A holiday at Santiniketan

সপ্তাহে দুদিন আমার অফিস আমাকে ছুটি দেয়। তবে হ্যা একদিন কিছুটা কাজ বাড়ি থেকে করে দিতে হয়। এদিক থেকে আমি একটু ভাগ্যবান বলতে হবে। আমি অবশ্য নিজেও তাই মনে করি। মাঝে মাঝে যদি এর সাথে অতিরিক্ত একটা ছুটি যোগ হয়ে যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। তার সুবিধা নিতে বেরিয়ে পড়া। এবারেও তেমনি একটা সপ্তাহ পাওয়া তে শান্তিনিকেতন দেখতে গেছিলাম প্রথমবারের জন্য। সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই লেখা holiday at Santiniketan.

আমি একটু অলস প্রকৃতির মানুষ। ছুটিতে পড়ে থাকতে বেশি পছন্দ করি কিন্তু মাঝে মাঝে জীবন সঙ্গিনীর তাড়াতেই বেরিয়ে পড়তে হয় আর একবার বেরিয়ে পড়লে বেশ লাগে কিন্তু। আসলে বেরোতে ভালো লাগে কিন্তু বেরনোর জন্য যে ঝামেলা সেটাই পোষায় না। যাই হোক এবারের যায়গা ছিলো শান্তিনিকেতন।

বর্ষার দিন কোথায় আর যাবো। একদিনের অতিরিক্ত ছুটি অর্থাৎ শনিবার বেরোন রবিবার দেখা সোমবার ফেরা। এত কমসময়ে কোথায় বা যাওয়া যায় বর্ষায় যদিও সমুদ্র বেড়ে লাগে কিন্তু কাছাকাছির সমুদ্র গুলো অর্থাৎ দিঘা বকখালি অনেক বার করে দেখা আর যেহেতু খুব সীমিত সময়ের জন্য যাওয়া তাই আগে থেকে কোন প্রস্তুতি নেওয়াও নেই। অর্থাৎ ট্রেনের টিকিট ও কাটা নেই তাই পুরি হবেনা। চিন্তা করা হলো শান্তিনিকেতন টা যাওয়া হয়নি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের যায়গা আর এই সময়টা ভিড়ও থাকবে না দেখে আসা যাক, যেমন ভাবা তেমন কাজ।

শান্তিনিকেতনে বিনা সংরক্ষণে যাওয়া। Travel to Santiniketan without reservation.

বন্ধুবান্ধব এবং আরো বিভিন্ন উৎস (internet) থেকে জানতে পারলাম শিয়ালদহ রেল স্টেশান এবং হাওড়া রেল স্টেশান থেকে দুই ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে (বিভিন্ন ট্রেন বিভিন্ন রকম সময় নেয়) পৌঁছানো যায় বোলপুর স্টেশানে আবার সেখান টোটো প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। কিন্তু আমার কাছে প্রশ্ন হলো আমি কোন ট্রেন ধরব কারন আমার সংরক্ষিত যায়গা নেই, তাই ২.৫ থেকে ৫ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে, ভিড়ে ঠেলা ঠেলি করে যাওয়া সম্ভব নয়। এবং আমি ইন্টারনেট থেকে ও আমার প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছিলাম না, কারন সেখানে সবাই বলছে ট্রেন আছে বিনা সংরক্ষণে যাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে কেমন ভিড় থাকে যায়গা পাওয়া যায় কি না সেটা নিয়ে। বিনা সংরক্ষণে স্ত্রী কে নিয়ে যাওয়া কতোটা ঠিক ঠাক সেটা কেউ তেমন ভাবে প্রকাশ করেনি।

যাইহোক এইসব নিয়ে আমি আমার এক সহযাত্রী (অফিস যাত্রী) কে জিজ্ঞেস করলাম। উনি বললেন দাদা তুমি শিয়ালদহ – রামপুরহাট লোকাল যাও ১২ঃ০৫ মিনিটে ছাড়ে অনেক স্টেশানে থামে এবং একটু বেশি সময় নেয় তবে ভালো ট্রেন আমি ওই ট্রেনে যাতায়াত করি। নিজের স্থিরতার জন্য রেলের অ্যাপ্লিকেশান (Where is my train এবং Sealdah Sub Tracking System) গুলো দেখে নিতে চাইলাম কোন ট্রেনের কথা উনি বলছেন। কিন্তু উনি যে ট্রেনের কথা বলেছিলেন সেই ট্রেন আমি দেখতে পেলাম না কিন্তু ১২ঃ১০মিনিটে শিয়ালদহ থেকে একটা ট্রেন যায় দেখাচ্ছে সেটার নাম শিয়ালদহ – গড্ডা মেমু স্পেশাল (Sealdah – Godda MEMU Special)। আমি ভেবেছিলাম ওই বন্ধুর সাথে কথা বলে বিষয়টা একটু নিশ্চিত হয়ে নেবো, কিন্তু যে কোন কারন বসত বন্ধুকে পাওয়া গেলোনা তাই আর জানাও হলোনা।

চলে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত শনিবার আমি গোদ্দা মেমু স্পেশাল ধরব বলে ঠিক করলাম। বেরিয়ে পড়লাম আমার নামখানা শিয়ালদহ লোকাল ধরে। শিয়ালদহে পৌঁছাবে ১১ঃ১৫মিনিটে। যেহেতু আমাদের বারুইপুর পর্যন্ত আমাদের প্রাত্যহিক টিকিট কাটাছিল আর আমদের স্টেশান (করঞ্জলি) থেকে কম্পিউটারে টিকিট কাটার ব্যাবস্থা নেই তাই বহড়ুর এক বন্ধু সহযাত্রী কে বললাম আমার জন্য দুটো টিকিট কাটতে বোলপুরের। সে টিকিট তো কাটল তাঁর সাথে আরো বন্ধুরা বলল তুই লোকাল ট্রেনে যাবি ভাই যাসনা খুব ভিড় হবে আজ শনিবার বসার যায়গা ও পাবিনা। এক কাজ কর তুই হাওড়া চলে যা ওখান থেকে ১১ঃ৫৪ মিনিটে শহিদ এক্সপ্রেস পেয়ে যাবি। ভালো যেতে পারবি যায়গা ও পেয়ে যাবি।

আমি আর আমার স্ত্রী একটু ভেবে নিলাম আমরা যদি নিউ গড়িয়া নেমে মেট্রো ধরে এস্প্লানেট যাই তারপর সেখান থেকে হাওড়া যাই সেখান থেকে ট্রেন ধরি ব্যাপার টা মন্দ নয় কিন্তু আমাদের সময়ে হবে না ট্রেনও পাবনা। আর গোদ্দা মেমু স্পেশাল যেহেতু শিয়ালদহ থেকে ছাড়ে তাই একটা সুযোগ হয়তো আছে বসার যায়গা পাবার। যদি দেখি যে যায়গা পাচ্ছিনা তাহলে হাওড়া চলে যাব। কারন এর পর শিয়ালদহ থেকে কোন ট্রেন আর ওর পরে নেই যাতে আমরা ঠিকঠাক সময়ে বোলপুর পৌঁছাতে পারি। আর শহিদ এক্সপ্রেস চলে গেলে আবার দুটোয় ট্রেন বোলপুরে যাওয়ার হাওড়া থেকে।তাহলে গদ্দা মেমু স্পেশালে না যেতে চাইলে আর একটা সুযোগ তবু থাকবে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরার।

শিয়ালদহ – গোদ্দা মেমু স্পেশালে শান্তিনিকেতন। Santiniketan Seadah – Godda MEMU Special

ট্রেনের ইউ টি এস অ্যাপ্লিকেশান দেখাচ্ছিল শিয়ালদহ থেকে গোদ্দা মেমু স্পেশালের ভাড়া ৭০ টাকা করে বোলপুর পর্যন্ত কিন্তু আমরা যেহেতু বহড়ু থেকে টিকিট কেটেছিলাম তাই আমাদের পড়ে গেছিলো ৯০ টাকা করে। আমরা সেই টিকিট বগলদাবা করে নিজেদের রাস্তা নিশ্চিত করে শিয়ালদহে নামলাম, ৬ নম্বর প্লাটফর্মে দেখলাম আমাদের ট্রে শিয়ালদহ – গোদ্দা মেমু স্পেশাল অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমার সধর্মিণী চলে গেলো আমাদের উদরপূর্তির জন্য কিছু যোগাড় করতে আর আমি চলে গেলাম আমাদের যাত্রা যাতে সুন্দর হয় তারজন্য একটা জানালার ধারে যায়গা পাওয়া যায় কিনা দেখতে।

যদিও আমি একটু চিন্তায় ছিলাম যায়গা পাবো কি না। কিন্তু ট্রেনে উঠেই মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো। প্রচুর ফাঁকা যায়গা সারিসারি গদিওয়ালা কেদারা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি খুব তাড়াতাড়ি দুটো কেদারা দখল করে ফেললাম। ট্রেন যাত্রা সত্যি খুব ভালো ছিলো যদিও মোট ২১ টা স্টেশানে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু খুব ভিড় না থাকায় খুব শান্তি পূর্ণ ভাবে যাওয়া গেছে এবং অন্য ট্রেনের থেকে এর শব্দ এবং ঝাকুনি অনেক কম। যা আমাদের যাত্রা কে সত্যি আলাদা মাত্রা দিয়েছিল। একবারের জন্য মনে হয়নি ট্রেনের জায়গা সংরক্ষণের দরকার ছিল।

শান্তিনিকেতনে কি করবেন। What to do at Santiniketan.

এইরকম ছোট ছুটিতে একদিনের জন্য বেড়াতে গেলে শান্তিনিকেতন আপনাকে খালি হাতে ফেরাবে না। আমরা ট্রেন থেকে বোলপুর স্টেশানে নামলাম বিকাল ৩ঃ৫০ দিকে। ট্রেনের নির্ধারিত টাইম ছিল ৩ঃ৪৭ মিনিট। স্টেশান থেকে বেরিয়ে বোলপুর বাজারের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে ভাবছি, কোন দিকে যেতে হবে আর হাতে গুগুল ম্যাপ আমাকে রাস্তা দেখানোর চেস্টা করে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় একটা টোটো এসে জিজ্ঞেস করলো যাবেন? সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলাম বহুবার শোনা সেই নাম সোনাঝুরি হাট।

১. সোনাঝুরি হাট

টোটো দাদা আমাদের কে সনাঝুরি হাটে পৌঁছে দিতে রাজি হলো ৭০ টাকার বিনিময়ে (দুজনের) যদিও এর জন্য একটু কসরত করতে হয়ে ছিল। ১০০ টাকার নিচে নামতেই চাইছিল না। শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে টোটো তে করে পৌঁছে গেলাম সোনাঝুরি হাটে। এই প্রথম বার আমরা ট্রেন থেকে নেমে হোটেল মানে রাত কাটানোর জন্য বাসস্থান না খুঁজে বেড়াতে আরম্ভ করে দিয়েছি পিঠে লটবহর নিয়েই। তবে হ্যাঁ লটবহর নিয়ে যাওয়া সার্থক সার্থক হলও সোনাঝুরি হাট একবার অতিরিক্ত দেখা হয়ে গেলো।

এই ধরনের হাট আমার কাছে প্রথম। কারোন এর আগে আমি হাট দেখেছি বিক্রেতারা শুধুই পসরা সাজিয়ে বসেন কিন্তু এখানে পসরা তো ছিলই তার সাথে সাথে ছিল স্থানীয় শীল্পিদের মনোমুগ্ধকর গান ও নাচ এবং কিছু কিছু পর্যটক এই স্থানীয় শিল্পি দের সাথে পা মেলাচ্ছিল যা এই সোনাঝুরি হাট কে একটা আলাদা মাত্রা দিচ্ছিল।

২. কোপাই নদী

যেহেতু এটা ছিল আমাদের একেবারে অপরিকল্পিত ভ্রমণ তাই আমাদের একটু দেখে নেওয়ার ছিল পরের দিন মানে রবিবার আমরা কোথায় কোথায় বেড়াতে পারি আর কতো ভালো করে সব জিনিস কে আত্মস্থ করতে পারি। যেকোন ভ্রমনে আমরা চেষ্টা করি প্রথমে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে তাতে যদি না হয় তাহলে তাহলে স্থানীয় বাহন ব্যাবহার করতে আর তা যদি না হয় তখন আলাদা ব্যাবস্থা এখান দুটো জিনিস হয় দুটোই আমারা খুবই প্রিয়।

প্রথম টাকা বাঁচে তাতে আমি আবার পরের ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে পারি। দ্বিতীয় আমার ভ্রমণ মানে যায়গা দেখা জানা সেখান কার পরিবেষ মানু্য সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য নেওয়া এই রকম যাতায়াতে সেটা পাওয়া যায়। তবে হ্যাঁ সময় এবং খাটুনি দুটোই বেশি হয় কিন্তু মনের খোরাক এই সমস্যা কে দূর করে দেয়।

তো ঠিক হলো আমরা সকালে উঠে হাঁটতে হাঁটতে খোয়াই নদী দেখতে যাব।যা ভাবা তাই কাজ সকাল ৬ টায় উঠে হাঁটা আরম্ভ করলাম বেশি দূর ছিলনা আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে মাত্র ২ কিলোমিটারেরে মতো পাশ দিয়ে অনেক চারচাকা, টোটো ইত্যাদি চলে গেলো পিছনে পিছনে আমরাও পৌঁছলাম কাছের দোকানে দেখলাম মাটির হাঁড়িতে চা হচ্চিল সেখান থেকে দুকাপ চা নিলাম। পিছনে ঘুরে দেখি আরেক জনের খিদে গেছে তাই আমাদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তাকেও দিলাম একপ্যাকেট বিস্কুট। সেটা খেয়ে আমার পিছনে পিছনে চলে এলো আমি হাত নেড়ে বুঝিয়ে দিলাম আর নেই। আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল তার পর মাটিতে শুয়ে পড়ে ঘুমিয়েই পড়ল।

আমরা খোয়াই নদীর তীরে বসে আমাদের চা শেষ করলাম কিছু সুন্দর ছবি তুললাম তার পর আমরা পরের জায়গার উদ্দ্যেশ্যে উঠে পড়লাম।

৩. কংকালিতলা

কংকালিতলা

কংকালিতলা খুবি প্রসিদ্ধ একটি স্থান। পুরানে কথিত আছে মহাদেবের স্ত্রী সতী যখন দেহ ত্যাগ করেন তখন মহাদেব তাঁকে কাঁধে নিয়ে তান্ডব করতে থাকেন। তখন বাবা মহাদেবের এই তান্ডব বন্ধ করার জন্য বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে প্রাণহীন সতীর দেহকে ৫১ খণ্ডে বিভক্ত করে দেন এবং এই ৫১ খন্ড যেখানে যেখানে পড়ে সেখানে পিঠস্থান অর্থাৎ পুন্য ভুমিতে পরিনত তারই একটা কংকালি তলা।

আমাদের গুগুল ম্যাপ দেখাচ্ছিল খোয়াই থেকে কংকালিতলা ৮.৩ কিলোমিটার এটা আমাদের হেঁটে সম্পূর্ণ করা সম্ভব ছিলনা এমন নয় কিন্তু আমাদের হাতে সময় কম ছিল তাই আমরা চাইছিলাম একটা স্থানীয় বাহন পেতে। যেমন ভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতায়াত করে। কিন্তু আমরা তেমন কিছু পাচ্ছিলাম না তাই হাঁটা আরম্ভ করলাম। আর একটা টোটো চলে এলো আমরা চাইছিলাম আমাদেরকে কংকালিতলা পৌঁছে দিয়ে আসবে পরে আমরা নিজেরা চলে আসব। কিন্তু সেটাও হলো না কারন ওখানে গাড়ি একেবারে ভাড়া করা ছাড়া অন্য উপায় থাকল না তাই আমরা সারাদিনের জন্য একটা টোটো নিয়ে নিলাম আমার মনে হয় কমেই পেয়েছিলাম আমাদের থেকে ৪০০ টাকা নিয়েছিল।

কংকালিতলা গিয়ে অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম ওখানে মন্দিরের মধ্যে কোন পুরোহিতের দাপট নেই। পান্ডাদের ঝামেলা নেই। ইচ্ছা হলে পুজা দাও নাহলে যারা পুজা দিতে চায় তাঁদের সাথে লাইন দিয়ে মন্দিরে গিয়ে ঠাকুর দর্শন করো। নতুবা ফাঁকা যায়গায় গাছ তলায় বসে পুরো যায়গা উপোভোগ করতে পারো। সত্যি ভালো লাগবে। শান্তি অনুভব করবে।

আমরা প্রায় একঘণ্টার মতো বা তারো বেশিক্ষন ছিলাম তার পর ওখান থেকে বেরিয়ে চলে আসি

৪. বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণ।

আমরা যেহেতু টোটো সারা দিনের জন্য নিয়েনিয়েছিলাম তো এবার শুধু জায়গা গুলোতে পৌঁছানো এবং দেখার পালা তাই এবার চলে এলাম বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণ। বিশ্বভারতী নিয়ে নতুন করে তো কিছু বলার নেই আপনি আমার থেকে হয়তো ভালো জানেন। তবে আমার কাছে সব কিছুই নতুন। তাই ১০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে জাদুঘরে ঢুকে গেলাম, এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতের লেখা, বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া উপহার (রুপোর শাঁক, খাবারের প্লেট) তাঁর ব্যাবহার করা চায়ের কাপ, খাগের কলম, এগুলো আমার কাছে এক অনবদ্য পাওয়া।

জাদুঘর থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম বিদ্যায়তনে (campus) সেখানে সুন্দর করে সাজানো চারিপাশে একটু সময় কাটিয়ে চলে বেরিয়ে এলাম।

৫. বল্লভপুর বন্যজন্তু আশ্রয়স্থল। (Ballavpur Wild life sanctuary).

বল্লভপুর বন্য জন্তুর আশ্রয় স্থল

আমাদের সারথি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন এরপর আমরা কোথায় যাব। আমরা চাইলাম ডিয়ার পার্ক যেতে, উনি বললেন চলুন কিন্তু ওখানে তেমন কিছুই দেখার নেই টিকিট ও তুলনা মূলক অনেক বেশি তাই এখন আর কেউ তেমন যায়না। আমরা কিছুক্ষনের মধ্যে ডিয়ার পার্ক পৌঁছলাম। ১০০ টাকা করে দুটো টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম হরিণের রাজ্যে হরিণের সাথে কিছু সময় কাটাতে এসব জায়গায় তো হরিণের সাথে সময় কাটানো যায় না হরিণকে দেখতে হয়। (হরিণের সাথে সময় কাটিয়ে ছিলাম কন্যাশ্রমে)

নাম ডিয়ার পার্ক হলেও শুধু হরিণ নয় হরিণ তো আপনাকে মাতিয়ে দেবে তাঁর সাথে অতিরিক্ত পাওনা হিসাবে আছে সজারু, রঙ্গিন মাছের সংগ্রহ, আমরা সজারু, হরিণ, রঙ্গিন মাছ দেখে এগোতে লাগলাম জঙ্গল বেষ্টিত রাস্তা দিয়ে কথাও থেকে ময়ূরের ডাক শুনতে পেলাম বেশ স্পষ্ট কিন্তু দেখতে পেলাম না। যাইহোক আরো একটু এগোতেই ওয়াচ টাওয়ার দেখতে পেলাম কিন্তু এই মনোরম পরিবেশ ছেড়ে ওয়াচ টাওয়ারে আর উঠতে ইচ্ছা করল না। সামনে এগোতেই একটা বেঞ্চ দেখে তাতে বসে পড়লাম। শান্ত স্নিগ্ধ নিরিবিলি পরিবেশ তারসাথে আকাশে মেঘের চাদর কিছুক্ষনের জন্যে আমাদের অস্তিত্ব আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ব্যাস্ততা কে ভুলিয়ে দিয়েছিল।

৬. সৃজনি শিল্পগ্রাম।

সৃজনি শিল্প গ্রাম

এর পরের গন্তব্য ছিল সৃজনি শিল্প গ্রাম। যাওয়ার পথেই আমাদের সারথি বলে দিয়েছিলেন এখানে ভিড় থাকে এবং এখানকার টিকিট আগের থেকে বেড়েছে আগে ২০ টাকা ছিল এখন কত হয়েছে জানেন না। আমরা রাস্তাতেই বুঝে গেলাম ভিড়ের পরিমাণ কিরুপ হতে পারে। টোটো থেকে নেমে প্রথমে একটু চায়ের খোঁজ করলাম অনেক চাএর দোকান।

পছন্দ মতো চা খেয়ে মানে পান করে ত্রিশ টাকা করে দুটো টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম আমার কুটির শিল্পমেলাতে এখানে বিভিন্ন দেশের জীবন ধারনের সামগ্রী চিত্রায়িত করা আছে। সেখান কার মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন দৃশ্য এক একটা কুটেরে ফুটে উঠেছে। সত্যি অসাধারন চিত্রনৈপুণ্য যদিও ছবি সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝিনা তবু অসাধারন লেগেছে এবং মনে হয়েছে ছবি গুলো শুধু ছবি নয় ছবির গ্রাম এবং মানুষ গুলো যেন ওই দিকে আছে।

কুটির গুলো দেখা শেষ করে বিপণির দিকে চলে গেলাম কিছু জিনিস ব্যাগ বন্দি করতে করতেই অনেক সময় হয়ে গেলো।

৭. সরকার রাজবাড়ি।

এর পরের দেখা ছিল সরকার রাজবাড়ি। আমরা সেটাকে শেষ করে তাড়াতাড়ি দুপুরের খাবার খেতে চলে গেলাম

আমাদের সারথি জানালো এখানে কয়েকটা ভালো খাবার জায়াগা আছে যেখানে আমরা দুপুরের খাবার মজা নিতে পারি। সারথি আমাদের দুই কন্যা রেস্তোরা তে নিয়ে গেল যেখানে আমরা আমাদের দুপুরেরে খাওয়া সম্পূর্ণ করলাম। আমাদের তারপরের গন্তব্য ছিলো যেটা আমরা আগের দিন ও গেছিলাম, সোনাঝুরি হাট।

অবশেষে আমরা আমাদের ঘরে ফিরে এলাম পরের দিন ছিল আমাদের ঘরে ফেরার দিন।তাই আমাদের আগোছালো জিনিস গুলো গুছিয়ে ফেললাম দুজনে মিলে।

পরের দিন সকাল, মনে হয় রাত থেকেই, বৃষ্টি হচ্ছিল এবং আকাশের অবস্থা ও খুব খারাপ ছিল আসলে সোমবারের ছুটিটা ছিল জন্মাষ্টমী আর জন্মষ্টমী তো বৃষ্টির দিন।আমি বার বার আমদের ঝুলবারান্দায় এসে বৃষ্টির পরিমাণ দেখে দেখে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষন পরে আমার কাছে একটা ফোন এলো আমাদের আগের দিনের সারথীর, যেটা আমার কাছে একেবারেই অযাচিত এবং আমি ভাবিইনি। কিন্তু ভালো লেগেছিল কারন আমি হয়তো অন্য কোন গাড়িতে আস্তেই পারতাম কিন্তু এটা বুঝলাম উনি অন্যদের কথা মনে রাখেন।

বোলপুর থেকে হাওড়া।

যাইহোক যাওয়ার দিনের মতো ফেরার দিন ও একই সমস্যা, চিন্তা একটাই বিনা সংরক্ষণে ট্রেনে যাওয়াটা ঠিকঠাক হবে তো। তবে আমার একজন সহকর্মী বলেছিলেন অসুবিধা হবেনা সেই যা একটু ভরসা। টিকিট কাউন্টারে গেলাম যদি সংরক্ষিত টিকিট পাওয়া যায় কিন্ত হলও না।দুটো সাধারন কামরার টিকিট কেটে নিলাম দাম নিলো ১৪০ টাকা। প্লাটফর্মে চলে এলাম সময়ের অনেক আগে। ট্রেন ও প্রায় ১৫ মিনিট দেরি করে স্টেশানে এলো। যদিও প্লাটফর্মে অনেক ভিড় ছিল তবুও দুটো জানালার ধারে বসার জায়গা পেতে অসুবিধা হলও না।

Leave a Comment